জাতীয়
রায়ে খুশি রণজিৎ নাথ স্বস্তি স্বজনহারাদের
‘রায়ে
আমি খুশি।’ বললেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতনের শিকার রণজিৎ নাথ
ওরফে বাবু নাথ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি
জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনে প্রতিক্রিয়ায়
গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে এ কথা বলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকালে ফরিদপুরের সদর উপজেলার বাকচর গ্রামের স্বজনহারা ব্যক্তিরাও এ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের তৃতীয়টি ছিল রণজিৎ নাথকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনসংক্রান্ত। এ অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের জুনে ফরিদপুর শহরের রথখোলা মহল্লার রণজিৎকে বাড়ি থেকে ধরে সেনাক্যাম্পে নিয়ে মুজাহিদের নেতৃত্বে নির্যাতন করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং এ অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকচরে হত্যাকাণ্ডসহ তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় শুনে প্রতিক্রিয়ায় এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী রণজিৎ নাথ বলেন, ‘মুজাহিদ নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এ সত্য আজ আইনগতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিচারে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এ রায়ে আমি খুশি। তবে অতি দ্রুত এ রায় কার্যকর করতে হবে। এ রায় কার্যকর করা হলে দেশ, জাতি এবং সর্বোপরি ফরিদপুর কলঙ্কমুক্ত হবে।’
মুজাহিদের বিরুদ্ধে সপ্তম অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ অপরাধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ অভিযোগ অনুসারে, মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর গ্রামে একাত্তরের ১৩ মে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়জনকে হত্যা ও এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। রায় শুনে নিহতদের স্বজনেরা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
ওই নয়জনের মধ্যে ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ সাহা ও জগদীশ মিত্র। বীরেন্দ্রনাথ সাহার স্ত্রী বেলা রানী সাহা (৭০) রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীকে বাড়ি থেকে ধরে পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাকচর মন্দির প্রাঙ্গণে। সেখানে নির্বিচারে গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্বামী হারিয়ে অনেক কষ্টে তিন নাবালক ছেলেকে নিয়ে দিন কাটিয়েছি। রায় কার্যকর হলে বুঝব, এত দিন পর হলেও স্বামী হত্যার বিচার পাইলাম।’
জগদীশ মিত্রের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী যশোধা রানী মিত্র বলেন, ‘আমার ভাশুরসহ যাঁদের সেদিন হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা কেউ ফিরে আসবেন না। তবে এইটুকু সান্ত্বনা, সেদিন যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ফাঁসি হবে।’
মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনীত চতুর্থ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এ অভিযোগ ছিল ফরিদপুরের আবু ইউসুফ পাখীকে মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতনসংক্রান্ত। ইউসুফ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। রায়ের পর তিনি বলেন, ‘আমার ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তা সত্য। আমি ট্রাইব্যুনালে সত্য কথাই বলেছি। কেন আমার অভিযোগ প্রমাণিত হলো না, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া: ফরিদপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট। মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে।’ সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ বলেন, এ রায়ে জাতি কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেল। সেই সঙ্গে কলঙ্কমুক্ত হলো ফরিদপুরবাসী।
মুজাহিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া: রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মুজাহিদের বড় ভাই ও পৌর জামায়াতের আমির আলী আফজাল মো. খালেস বলেন, ‘মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুরেই ছিল না। অথচ ফরিদপুরের দুটি ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’ মুজাহিদের বাড়ি ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের মাওলানা আবদুল আলী সড়কে।
রায় ঘোষিত হওয়ার পর শহরে আনন্দ মিছিল বের করে জেলা আওয়ামী লীগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি জনতা ব্যাংকের মোড়ে এলে সেখানে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে নেতারা তাঁদের নিবৃত্ত করেন।
থানায় জামায়াতের চার নেতা: জেলা জামায়াতের চার নেতাকে দুপুরে চকবাজার থেকে পুলিশ কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। তাঁরা হলেন জেলা জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম বরাটি, ফরিদপুর পৌর জামায়াতের আমির আলী আফজাল মো. খালেস, থানা জামায়াতের আমির মো. জসীমউদ্দীন ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য আবদুদ তাওয়াব।
থানা থেকে মুঠোফোনে শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ কোন উদ্দেশ্যে আমাদের এনেছে, তা বুঝতে পারছি না।’
ফরিদপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘তাঁদের ইফতারি খাওয়ানোর জন্য থানায় আনা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে আমরা একত্রে বসে শহরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি।’
মুক্তিযুদ্ধকালে ফরিদপুরের সদর উপজেলার বাকচর গ্রামের স্বজনহারা ব্যক্তিরাও এ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগের তৃতীয়টি ছিল রণজিৎ নাথকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনসংক্রান্ত। এ অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের জুনে ফরিদপুর শহরের রথখোলা মহল্লার রণজিৎকে বাড়ি থেকে ধরে সেনাক্যাম্পে নিয়ে মুজাহিদের নেতৃত্বে নির্যাতন করা হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং এ অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকচরে হত্যাকাণ্ডসহ তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় শুনে প্রতিক্রিয়ায় এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী রণজিৎ নাথ বলেন, ‘মুজাহিদ নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এ সত্য আজ আইনগতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিচারে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এ রায়ে আমি খুশি। তবে অতি দ্রুত এ রায় কার্যকর করতে হবে। এ রায় কার্যকর করা হলে দেশ, জাতি এবং সর্বোপরি ফরিদপুর কলঙ্কমুক্ত হবে।’
মুজাহিদের বিরুদ্ধে সপ্তম অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ অপরাধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ অভিযোগ অনুসারে, মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর গ্রামে একাত্তরের ১৩ মে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়জনকে হত্যা ও এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। রায় শুনে নিহতদের স্বজনেরা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
ওই নয়জনের মধ্যে ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ সাহা ও জগদীশ মিত্র। বীরেন্দ্রনাথ সাহার স্ত্রী বেলা রানী সাহা (৭০) রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীকে বাড়ি থেকে ধরে পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাকচর মন্দির প্রাঙ্গণে। সেখানে নির্বিচারে গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্বামী হারিয়ে অনেক কষ্টে তিন নাবালক ছেলেকে নিয়ে দিন কাটিয়েছি। রায় কার্যকর হলে বুঝব, এত দিন পর হলেও স্বামী হত্যার বিচার পাইলাম।’
জগদীশ মিত্রের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী যশোধা রানী মিত্র বলেন, ‘আমার ভাশুরসহ যাঁদের সেদিন হত্যা করা হয়েছে, তাঁরা কেউ ফিরে আসবেন না। তবে এইটুকু সান্ত্বনা, সেদিন যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ফাঁসি হবে।’
মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনীত চতুর্থ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এ অভিযোগ ছিল ফরিদপুরের আবু ইউসুফ পাখীকে মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতনসংক্রান্ত। ইউসুফ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। রায়ের পর তিনি বলেন, ‘আমার ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তা সত্য। আমি ট্রাইব্যুনালে সত্য কথাই বলেছি। কেন আমার অভিযোগ প্রমাণিত হলো না, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া: ফরিদপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট। মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে।’ সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ বলেন, এ রায়ে জাতি কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেল। সেই সঙ্গে কলঙ্কমুক্ত হলো ফরিদপুরবাসী।
মুজাহিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া: রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মুজাহিদের বড় ভাই ও পৌর জামায়াতের আমির আলী আফজাল মো. খালেস বলেন, ‘মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুরেই ছিল না। অথচ ফরিদপুরের দুটি ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’ মুজাহিদের বাড়ি ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের মাওলানা আবদুল আলী সড়কে।
রায় ঘোষিত হওয়ার পর শহরে আনন্দ মিছিল বের করে জেলা আওয়ামী লীগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি জনতা ব্যাংকের মোড়ে এলে সেখানে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে নেতারা তাঁদের নিবৃত্ত করেন।
থানায় জামায়াতের চার নেতা: জেলা জামায়াতের চার নেতাকে দুপুরে চকবাজার থেকে পুলিশ কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। তাঁরা হলেন জেলা জামায়াতের আমির শামসুল ইসলাম বরাটি, ফরিদপুর পৌর জামায়াতের আমির আলী আফজাল মো. খালেস, থানা জামায়াতের আমির মো. জসীমউদ্দীন ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য আবদুদ তাওয়াব।
থানা থেকে মুঠোফোনে শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ কোন উদ্দেশ্যে আমাদের এনেছে, তা বুঝতে পারছি না।’
ফরিদপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘তাঁদের ইফতারি খাওয়ানোর জন্য থানায় আনা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে আমরা একত্রে বসে শহরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি।’